সরকার পরিবর্তনের পরে বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে যে ধর্মীয় নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়, তা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এবার অনেকাংশেই বেশি। কার্যত দেশে কোন নির্বাচিত সরকার না থাকায় এবং আইন প্রনয়ন কারী সংস্থার কার্যক্রম ভংগুর থাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ধর্মীয় সং্খ্যালঘু ( হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান) ভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং আতংক সৃষ্টির মাধ্যমে ভয় দেখানোর প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে চোখে পড়ার মতো।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পর থেকে ২০ তারিখের মধ্যে হিন্দুদের লক্ষ করে প্রায় দুই হাজারের অধিক ঘটনার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যায়- যার মধ্যে রয়েছে উচ্ছেদ, ভূমি দখল, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও ধর্মীয় উপসনালয়ে ভাংচুর এবং এর ফলে অনেক আহত ও নিহত হয়েছে যার প্রকৃত সং্খ্যা গোপন করা হচ্ছে। হিন্দুদের দুর্গাপূজায়ও এসব হামলার বিচ্ছিন্ন খবর পাওয়া যায় এবং এ অবস্থা এখনও চলমান। যা নিসন্দেহে হিন্দু তথা তবাত সং্খ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির পর ইসলামপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এই প্রথম প্রকাশ্যে এতটা সক্রিয় সাংগঠনিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ অনেক ইসলামিক গোষ্ঠীর উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। সরকারের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টামণ্ডলীর চারিপাশে শুধু ইসলামিক উগ্রপন্থী দলের নেতাও কর্মীদের আনাগোনা লেগে থাকছে সর্বক্ষণ, এমনকি তাদের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সভায়ও ডাকা হচ্ছে। ফলস্বরূপ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিজবুত তাহরি খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যে সমাবেশ করেছে দেশের রাজধানীতে দিবালোকে। এছাড়াও ২০২৪ সালের শেষ মাসগুলোতে চরমপন্থী নেটওয়ার্ক “তৌহিদী জনতা” মহাউৎসবে একাধিক মাজার ভাংচুর করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসব কাজে ইন্ধনদাতার কাজ করছে, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তৈরীকৃত ভিন্ন কন্টেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। আর এতে সাধারণ মুসলমানদের মগজ ধোলাই দিয়ে সহজে তাদের কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। মোদ্দাকথা ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রভাবিত করে তাদের দিয়ে নৈরাজ্য করিয়ে নেয়া হচ্ছে কিংবা তাদের চুপ রেখে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তার স্বার্থসিদ্ধি করছে। ধর্মের নাম করে ফলে সমাজে নতুনভাবে আরো বিভেদের সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া পাহাড়ে ইসলামি দাওয়াতি কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে, আদতে বলপ্রয়োগে ধর্মান্তরিত করে সং্খ্যায় মুসলমান বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর মূললক্ষ যদিও ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে জংগী কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। পাহাড়ে যতটা মুসলিম বাড়বে, সীমান্তে শুধু ততটাই শক্তিশালী হবে উগ্র সন্ত্রাসবাদী ইসলামিক নেটওয়ার্কের ভয়াল হাত। এখনও এই ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের ভাতৃত্বে ফাটল ধরাচ্ছে যা অচিরেই হায়েনা হয়ে থাবা দিবে মানচিত্রের স্বকীয়তায়।



