“এই যে ভাই,ধর্মে যে বিশ্বাস করেন না, আপনি কি মানুষের কাতারে পরেন?” এমন কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়। “কেনো ভাই? আমি তো বিজ্ঞান পড়ে বড় হয়েছি, আমার
তো ধর্মে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই”। সঠিক উত্তর কিছুটা এরকম হওয়া উচিত। দুনিয়ার যতগুলো মানুষ এই ধর্মীয়মূর্খতায় আক্রান্ত, সবারই একই দৃষ্টিকোণ। এদের কথা একটাই,
হয় তুমি আমাদের ধর্মের কেউ, নাহলে তোমার আমাদের নিকট কোন অস্তিত্ব নেই। মজার কথায় আসি। এই যে তাদের বলা শব্দ “অস্তিত্ব”, তাদের ঈশ্বরের যে কোন অস্তিত্ব নেই, তারা সেটা মেনে নিতে চায় না। অথচ, অনাথ, দরিদ্র, অসহায় মানুষদের আর্থিক কিংবা মানসিক সাহায্য না বিলিয়ে তারা এই মূর্খতার বার্তা বিলিয়ে বেরাচ্ছে সবার নিকট। ভাবা যায় কি?
“ভালো ফলাফল পাবে কিভাবে, নামাজ পড়ো? ভগবান এর কাছে প্রার্থনা করো?”। ভাই, ভালো ফলাফল কিংবা চাকুরী পাওয়ার সাথে নামাজ পড়া বা ভগবানের কাছে প্রার্থনার কি সম্পর্ক? এই ধর্মান্ধ মানুষদের কাজ একটাই, কিভাবে কোন বিষয়ে এরা ধর্মকে টেনে নিয়ে আসবে, এতটুকুই! এবং, তাদের এই মূর্খতা শত বছর ধরে চলে আসছে।
এরা মনে করে, এদের সকল সমস্যার সমাধান হলো, নামাজ এবং প্রার্থনা। আমার কথা, আচ্ছা করুক, ভালো। কিন্তু, যারা এসবে বিশ্বাসী না, এদের প্রতি এসব ধর্মীয় আক্রমণ করার প্রয়োজনটা কি? এরা তো কিছু জানতে চায় নি, কিংবা উৎসাহিতও না। এদের কেন ধর্মীয়গোঁড়ামির শিকার হতে হচ্ছে?
এইতো, দুই বছর আগের কথা মনে পরে গেলো। অফিসে যাচ্ছিলাম এবং দেরি হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় কোন এক কারণে জ্যাম ছিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটা অবস্থায় কয়েকজন হুজুর পথ আটকালো। বুঝলাম, তারা তাদের ধর্ম প্রচার করতে প্রস্তুত। যেহুতু সময় নেই, আমি তাদের বিষয়টা খুব ভদ্রতার ভাষায়ই বললাম। এরা পরক্ষণে এমন দৃষ্টিনিক্ষেপ করলো, যা বলার
ভাষা কে সমস্ত উপায়ে হার মানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত অফিসের দিকে হাটা ধরলাম এবং খেয়াল করলাম এরা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। একই ভাবে, এক বছর আগের কথা হবে। বেলা বিকেল হবে। দুই বন্ধু একটি মন্দিরের পাশে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম। মন্দির থেকে এক ভদ্রলোক একটু কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “কিছু দরকার আপনাদের?”।
বললাম যে, না, কিছু দরকার নেই, আমরা এমনিতেই দাড়িয়ে আছি। ভদ্রলোক আবারও প্রচণ্ড কড়া গলায় বলে উঠলো, “কথা বলার জন্য তো আরো জায়গা আছে, এইদিকে কি? যান, অন্যদিকে যান”। আমরা কিছু একটা বলার ও ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আর, এদের মতন মানুষেরা প্রশ্ন তুলে,”এই যে ভাই,ধর্মে যে বিশ্বাস করেন না, আপনি কি মানুষের কাতারে পরেন?”
হাসিও পায়, কান্নাও পায়!
পৃথিবী মোটামোটি উন্নতির শিখরে। একটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চাই তার আহারের জন্য খাবার, তার নিতম্ব ঢাকার জন্য পোশাক, তার থাকার জন্য একটি বাসস্থান, এবং, প্রয়োজন তার ব্যক্তি-নিরাপত্তা। এই ধর্মের জন্য হিসাব ছাড়া মানুষের ব্যক্তি-নিরাপত্তা হারাচ্ছে, মুক্ত হয়েও তাদের বন্দির মতন আচরণ করতে হয়। এই ধর্মীয়মূর্খতায় আক্রান্ত মানুষগুলো “সমাজ” এবং “ধর্ম”, এক করে ফেলেছে। কোন কিছুতে বিশ্বাস করা মানা নয়। বরং, সে বিশ্বাসে অন্য কারো মানোবাধিকার লঙ্ঘন করার মতন অপরাধ মাফযোগ্য
নয়। সমস্যাটা কোন জায়গায় জানেন? এই ধর্মান্ধ মানুষদের পরিমাণ অনেক, অনেক বেশি। কথায় আছে, যে অপরাধ সবাই করে, সেটা অপরাধের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। শুধুমাত্র এর কারনেই, মানুষগুলো এরূপ জঘন্য কাজকর্ম করার সাহস পায় প্রকাশ্যেই। কারণ, তাদের নিকট সবাই জিম্মি। এবং, জিম্মিদের আত্মসমর্পণ করার ছাড়া কিছুই থাকে না। এই ধর্মীয়মূর্খতায় আক্রান্ত মানুষেরা যেন খুব দ্রুত তাদের এই বিরাম থেকে মুক্তি পায়, তাই-ই কামনা করি।