গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ একটি স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই দীর্ঘ সময়কালে দেশের সকল স্তরে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এমনভাবে শেকড় গেড়ে বসেছে যে আগামী ১৫ বছরেও তার ক্ষত মুছে ফেলা অত্যন্ত কষ্টকর একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। দেশের সর্বস্তরে এখন এমন এক অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে, যা থেকে আলোর পথ খুঁজে বের করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে এখন এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে দুর্নীতি নেই। শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, এমনকি আইন ও বিচার বিভাগ পর্যন্ত সবখানেই ঘুষ, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির রাজত্ব চলছে। মেধা, দক্ষতা ও নৈতিকতা হারিয়ে গেছে অর্থ ও প্রভাবশালীদের প্রলাপে। শিক্ষায় নকল, প্রশ্ন ফাঁস ও ভর্তি বাণিজ্য এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা, বাণিজ্যে সিন্ডিকেট, পণ্য মজুদ, ভেজাল এবং বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব—সব মিলে দেশে ন্যায়ের কোনো নির্ভরযোগ্য জায়গা নেই।
সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের জন্য অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুট, উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক বাজেট ও ভুতুড়ে খরচ—এসবের মাধ্যমে জনগণের টাকায় গড়ে উঠেছে রাজকীয় জীবনযাপন। একদিকে সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি ও ভ্রমণে ব্যস্ত, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ—বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি—চরম অর্থকষ্ট ও বেকারত্বে জর্জরিত।
কেউ সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই তার জন্য অপেক্ষা করছে গুম, খুন কিংবা নিখোঁজ হওয়ার ভয়। একের পর এক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্রনেতা কিংবা সাধারণ জনগণ ‘নিখোঁজ’ হয়েছে অথবা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এইসব ঘটনার কোনো সঠিক বিচার হয়নি। ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে যেন কেউ প্রতিবাদ না করে।
সর্বাধিক দুর্নীতি ঘটেছে চাকরির ক্ষেত্রে। মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও চাকরি পায়নি, অথচ অযোগ্য প্রার্থীরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি চাকরি পেয়ে গেছে। এতে করে একদিকে যেমন মেধার অপমান হয়েছে, অন্যদিকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও প্রশাসন অযোগ্যদের হাতে চলে গেছে।
বাংলাদেশের এই দুর্নীতিপরায়ণ, দমনমূলক ও বৈষম্যপূর্ণ ব্যবস্থার অবসান ঘটানো এখন সময়ের দাবি। একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের উন্নয়ন শুধু মুখে থাকবে, বাস্তবে তা হবে দুরাশা। আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ, ন্যায়ের ও মর্যাদার রাষ্ট্র উপহার দিতে হলে এখনই প্রয়োজন পরিবর্তনের ডাক দেওয়া, এবং সেই পরিবর্তনের জন্য সকল সচেতন নাগরিককে একসাথে কাজ করতে হবে।